জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও চরমে উঠেছে। ভারতের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনার মাঝে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ভারত যে কোনো সময় সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে চীনের ভূমিকা। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের কৌশলগত মিত্র চীন শুরু থেকেই এই হামলার নিন্দা জানালেও দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে আলাপকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পহেলগাম হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে মত দেন। একইসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখছে।
পাক-চীন সম্পর্ক ও ভারতের প্রতি কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা খাতে চীনের অবদান বিরাট। বিপুল বিনিয়োগ, ঋণ সহযোগিতা, অস্ত্র সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় চীন বরাবরই পাকিস্তানের পাশে থেকেছে। তবে চীনা নাগরিকদের ওপর পাকিস্তানে একাধিক হামলার ঘটনায় বেইজিংয়ের উদ্বেগও বেড়েছে।
বেইজিংয়ের তাই হে ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক আইনার ট্যাঙ্গেন বলেন, “অভিযোগের আগে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।” তাঁর মতে, তুরস্ক ও ব্রিকস দেশগুলোর সম্পৃক্ততায় একটি স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়া গড়ে তুললে উত্তেজনা কমানো সম্ভব।
অন্যদিকে কায়েদ-এ-আজম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহম্মদ শোয়েব মনে করেন, চীন কখনোই সরাসরি পক্ষ নেয় না, বরং আকারে-ইঙ্গিতে অবস্থান জানিয়ে দেয়। তাঁর মতে, চীন নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক লড়াইয়ে ব্যস্ত, তাই ভারতের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা চায় না।
চীনের সামরিক-প্রযুক্তি সহায়তা ও সীমাবদ্ধতা
পাকিস্তান চীনের ‘বাইডু’ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক, বিভিআর প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন পিএল-১৫), এবং সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। শোয়েবের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে আসা পাঁচটি অস্ত্রের মধ্যে চারটিই এসেছে চীন থেকে।
তবে চীন সরাসরি সংঘাতে জড়াবে না, সেটাও পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকরা ভালোভাবে জানেন। বরং তারা বিশ্বাস করে, প্রয়োজনের সময় চীন কৌশলগত ও কূটনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তবুও কূটনৈতিক চাপ ও সামরিক হুঁশিয়ারির মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে চীনের ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতিই হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা রক্ষার মূল চাবিকাঠি।