ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মোড়ের একটি চায়ের দোকানে কথা কাটাকাটির জেরে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. তানজীন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত যুবক রুবেল মোল্লা পালিয়ে যান।
তানজীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ফজলুল হক হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ছাত্র। অভিযুক্ত রুবেল মোল্লা ঢামেক মোড়ের একটি ভ্রাম্যমাণ সাইকেল গ্যারেজে কাজ করেন।
ঘটনার বিষয়ে তানজীন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে চা খেতে যান মো. আলমের চায়ের দোকানে। সেখানে রুবেল নামের ওই যুবক চায়ের মান নিয়ে দোকানদার আলমের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। তানজীন বিষয়টি থামাতে গেলে রুবেল তাকে হুমকি দিয়ে বলে, “আমি খুনের আসামি, একটা খুন করে এসেছি, আরেকটা করব এবার।” কিছুক্ষণ পর রুবেল ছুরি হাতে ফিরে এসে তানজীনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেন। অন্যদের চিৎকারে তানজীন দ্রুত সরে যাওয়ায় তিনি রক্ষা পান।
রুবেল পরে ছুরি দিয়ে আশেপাশের অন্যদেরও আঘাত করার চেষ্টা করে এবং শেষমেশ পালিয়ে যায় ঢামেক মোড়ের একটি নির্মাণাধীন গেট বেয়ে মসজিদের ছাদে উঠে। শিক্ষার্থীরা এরপর রুবেলের ব্যবহৃত গ্যারেজটি ভেঙে দেন।
চা দোকানি মো. আলম জানান, রুবেল প্রথমে চা খেতে চেয়ে পান করার পর তা ফেলে দিয়ে নতুন চা বানাতে বলেন। দ্বিতীয়বার চা দেওয়ার পরও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বিল নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে চায়ের কাপ ভাঙতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন এবং রুবেল হঠাৎ ছুরি বের করে হামলার চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে আসে এবং শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে নিরাপত্তা শঙ্কা ও মামলার ঝামেলার কথা বলে শুক্রবার সকালে তানজীন অভিযোগটি তুলে নেন।
তানজীন বলেন, “ঘটনার পর আমি আতঙ্কিত। সেই ব্যক্তি ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত। এখন হয়তো আমার চেহারা মনে নেই, কিন্তু পরে চিনে ফেললে আবার আক্রমণ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিএমসি মোড়ে তিনটি হলের শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেয়। এখানে একটি নিরাপত্তা বক্স স্থাপন করা জরুরি। ক্যাম্পাসে ভবঘুরে ও মাদকাসক্তদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রক্টরিয়াল টিম পাঠিয়েছি। আগামীকাল থেকেই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই, বিশেষ করে রাতের সময়।”
তিনি আরও জানান, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে একটি বড় সিন্ডিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৬০টি দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছি। ঢামেক ও অমর একুশে হলের পাশের দোকানগুলোতেও এমন সিন্ডিকেট কাজ করছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।