সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন এক স্বামী। ঘটনার পর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে খবর দেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার দিকে উপজেলার বিছানাকান্দি এলাকার বগাইয়া গ্রামে। নিহতের নাম রুবেনা বেগম (৩০)। তিনি আলী আহমদ (৩৫)-এর স্ত্রী। তাঁদের সংসারে রয়েছে তিনটি সন্তান।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম আওয়াজ সিলেটকে জানান, আলী আহমদ ও রুবেনা বেগমের মধ্যে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। পারিবারিক ঝগড়ার এক পর্যায়ে আলী আহমদ ক্ষিপ্ত হয়ে দা দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান রুবেনা বেগম। পরে আলী আহমদ আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নিজেকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া নতুন কিছু নয়। প্রায়ই তাঁদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও কলহ হতো। তবে এভাবে ভয়াবহ পরিণতি হবে তা কেউ ভাবতে পারেননি। ঘটনার পর গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিন সন্তানকে হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছেন নিহতের পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহত অবস্থায় আলী আহমদকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি তরিকুল ইসলাম আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কবার্তা
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পারিবারিক কলহ বা গৃহস্থালী বিরোধের সমাধান কোনোভাবেই সহিংসতার মাধ্যমে হতে পারে না। ছোটখাটো মতবিরোধ যদি সঠিক সময়ে মীমাংসা করা না যায়, তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পারিবারিক অশান্তি, মানসিক অস্থিরতা ও রাগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা বর্তমানে গৃহস্থালী সহিংসতার অন্যতম বড় কারণ। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহনশীলতা, বোঝাপড়া ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে তুলতে না পারলে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পারিবারিক কলহ নিরসনে স্থানীয় সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।