রাজধানীর রমনার ইস্পাহানি কলোনির ‘দ্য ওয়েসিস’ ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে সুফিয়া (১০) নামে এক শিশুকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়।
রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, নিহত সুফিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায়। তার বাবার নাম জামাল উদ্দিন। প্রায় ৮ মাস ধরে সে রাজধানীর রমনা এলাকার ওই বহুতল ভবনের নবম তলার একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিল।
ঘটনার বিবরণ
এসআই জাহিদুল বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ওই ফ্ল্যাটে যাই। বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে দরজা খুলে দেখা যায়, ঝরনার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে সুফিয়া গলায় ফাঁস দিয়েছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
পুলিশ জানায়, বাসাটিতে পরিবার নিয়ে থাকেন একজন চিকিৎসক। ঘটনার সময় তিনি ও তার স্ত্রী ছিলেন কক্সবাজারে বেড়াতে। বাসায় ছিল তিনজন গৃহকর্মী, একজন গাড়িচালক এবং গৃহকর্তার মেয়ে। তারাই সকালে বাথরুমে দরজা বন্ধ দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ও তদন্ত
এসআই জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সুফিয়ার মৃত্যুকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করছি। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে জানার জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রয়োজন। এ ছাড়া আমরা অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখছি।”
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “একজন শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে কোনো নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে— তা আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।”
গৃহকর্তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
সামাজিক সংগঠন ও শিশু অধিকারকর্মীরা ইতোমধ্যে এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা বলেন, ১০ বছর বয়সী শিশুকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখা এবং তার আত্মহত্যার ঘটনা এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এ ঘটনায় গৃহকর্তার দায় ও ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
একটি শিশু কেন বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো, সে কি কোনো শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল— এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্তে গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ।
শেষ কথা
বাংলাদেশে শিশু গৃহকর্মীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও বাস্তবে এখনো অনেক শিশুই অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সুফিয়ার মৃত্যু সেই চিত্রকেই আবারও সামনে নিয়ে এলো। এই ঘটনায় সুবিচার ও পূর্ণ তদন্তের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।