কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর, মাথার চুল কেটে দেওয়া এবং তার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে নারকীয় এই নির্যাতনের দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন—রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভীন খাতুন এবং বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।
পুলিশ জানায়, সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে গ্রাম্য সালিসের নামে স্থানীয় কয়েকশ নারী-পুরুষ ওই নারীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে রিপনের বাড়িতে পুনরায় নির্যাতন চালায়। পরে তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। গ্রাম্য সালিসের নামে তার দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভিকটিম বর্তমানে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। তার শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার চুল কাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ, তিনি প্রতিবেশী রিপনকে ডেকেছিলেন বাড়ির কিছু ইলেকট্রিক কাজ করানোর জন্য। সেই সুযোগে রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন তাকে মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। রাতে তাকে আবারও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি শুধু ভিকটিমকে উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে তুলে দিয়েছি। এর বাইরে কিছু জানি না। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত মুক্তি খাতুন বলেন, “আমি শুধু দড়ি দিয়ে বেঁধেছিলাম আর একবার চড় মেরেছিলাম। তবে চুল কে কেটেছে জানি না।”
এই ঘটনার পর থেকে ভিকটিমের স্বামী পলাতক রয়েছেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের দরজায় তালা, ভাঙচুরের চিহ্ন স্পষ্ট এবং গোয়ালঘর খালি। ভিকটিমের দাবি, শুধু চুল কাটা বা মারধরই নয়, তার বাড়ি থেকে গরু-ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়েছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ জানান, “ঘটনার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করি এবং ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
পুলিশ বলছে, এই ঘটনার ভিডিও ও চুলের অংশসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা সমাজে বিচারবহির্ভূত সহিংসতার সংস্কৃতি গড়ে তোলে, যা আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ।